ধর্মবিশ্বাস সংশোধনের উপায়
(البنغالية- evsjv-bengali)
কামাল উদ্দিন মোল্লা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান
م2009 - ھ1430
﴿ كيفية تجديد العقيدة﴾
(باللغة البنغالية)
كمال الدين ملا
مراجعة : عبد الله شهيد عبد الرحمن
2009 - 1430
ধর্ম বিশ্বাস সংশোধনের উপায়
নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য। আমরা তার প্রশংসা করছি, তার নিকট সাহায্য চাচ্ছি, ক্ষমা চাচ্ছি এবং তারই উপর ঈমান আনছি। আর আমাদের নফসের কুমন্ত্রণা এবং খারাপ আমল করা হতেও সাহায্য চাচ্ছি। আল্লাহ তাআলা যাকে হেদায়েত করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না, আর যে গোমরা হয় কেউ তাকে হিদায়াত করতে পারে না। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোন মাবুদ নেই, তিনি এক এবং তার কোন অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বান্দা ও প্রেরিত রাসুল।
বড়দের মর্যাদার মাপকাঠি
সবকিছু আমার জানা আছে অথবা আমার জানা বস্তুটিই সঠিক এমন দাবী স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও করেননি। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আল্লাহর আদেশে বললেন: এটা আল্লাহর একটি আদেশ মাত্র। আর আমাকে জ্ঞানের সামান্য দেয়া হয়েছে। এ হলো পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী মানবের নিজের বিষয়ে মন্তুব্য। তা ছাড়া কোন কোন সিদ্ধান্তে তাঁর চেয়ে অন্য সাহাবী- উমর রা. এর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে ও মহান গ্রন্থ কুরআনে এসেছে। এতে প্রতিয়মান হয় যে, ভুল আমাদের পিছু ধাওয়া করে। আমরা দীর্ঘ সময় যাবৎ পালন করে আসা আমাদের কোন কাজ, মত, আদর্শ পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হলে তা ত্যাগ করা দোষণীয় নয় । এটা আমাদের পূর্ববর্তীদের আমলও ছিল। এমনিভাবে বিশ্বাস করতে হবে আমাদের অনুকরণীয় ব্যক্তিবর্গও ইমাম, পীর, দরবেশ, শিক্ষক, অথবা পার্থিব কোন নেতা ভুলের উর্দ্ধে নয়। সবক্ষেত্রে তাদের কথাই আমল করতে হবে এবং তাদের সব কথা ও কাজ নির্ভুল তাও অবাস্তব। কারণ এমন অন্ধ বিশ্বাসের ফলে বহু ক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ হাদীস মোতাবেক আমল করা সম্ভব হয় না। যা বড় ধরণের অপরাধ।
মুসলিমদের জন্য এটাই কর্তব্য হওয়া উচিত যে, সে আল্লাহর ইবাদত ঐ ভাবে করবে, যেভাবে তিনি তার কিতাবে নির্দেশ দিয়েছেন, আর যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ সুন্নাতের মধ্যে নির্দেশিত হয়েছে। তারপর এই দুই মূল ভিত্তি হতে যে সমস্ত হুকুম আহকাম বের হয়েছে, সে অনুযায়ী সে চলবে। আর এ জাতীয় হুকুম আহকামের মূলসূত্রগুলো বের করা সকলের জন্য সহজ নয়। সে কারণেই আল্লাহ তাআলা এই উম্মতের কল্যাণার্থে বহু সম্মানী আলেমদের আভির্ভাব ঘটিয়েছেন। সাহাবা, তাবেয়ীন এবং তাদের পরবর্তীগণের মধ্য হতেও। তারা আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে উত্তমভাবে অনুধাবন করেছেন। আর সাথে সাথে আল্লাহর কিতাব ও নবীর সুন্নাহকে খুবই সুক্ষ্ণভাবে বুঝতে সচেষ্ট হয়েছেন। তারপর সেখান থেকে হুকুম আহকাম বের করার প্রয়াস পেয়েছেন। ফলে, তারা সাধারণ লোকদের সম্মূখে ঐ সসস্ত আহকামকে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন যাতে তারা সঠিক দিক নির্দেশনা পেয়ে হিদায়াত ও সঠিক বুঝের উপর চলতে সক্ষম হন। তারা তাদের সাধ্যমত যে কষ্ট মেহনত করেছেন, তাতে আল্লাহ তাআলা তাদের উপর রাজী খুশী হয়ে গেছেন।
সুক্ষ এ কাজ করতে গিয়ে গবেষণা কর্মে তাদের কোন কোন কথা ও কাজ অপরের সাথে বিরোধপূর্ণ হয়েছে। আর কখনও কোন মাসআলায় তারা একাধিক ফতোয়া দিয়েছেন, এরও অনেক কারণ রয়েছে যা আলোচনায় আসছে। এবং মতবিরোধ এমন পর্যায় যায়নি যে তাদেরকে দোষ দেয়া ওয়াজিব বা মুবাহ হয়ে দাড়ায়। বরং প্রতিটি মুসলিম ঐ কথাকে গ্রহণ করেছেন, যা তিনি দলীলসহ সহীহ মনে করেছেন এবং তার উপরই তিনি আমল করেছেন। আর যে ব্যক্তি দলীল খুজতে অপারগ, তিনি কোন আমলওয়ালা বিশ্বাসী মুত্তাকী মুফতিকে প্রশ্ন করে তা গ্রহণ করে তার উপর আমল করেছেন।
অনর্থক বিতর্কে লাভ হয় শত্রুপক্ষের
যখন লোকেরা তাদের পছন্দনীয় কোন কোন ব্যক্তি ও তাদের বক্তব্যসমূহকে অন্ধভাবে দৃঢ়তার সাথে আকড়ে ধরতে থাকে। সাথে সাথে তাদের নানা ধরণের কামালিয়াত ও প্রশংসা করতে থাকে। তাদের ফজল, তাকওয়া ও ইলমের প্রশংসা করতে থাকে। আর অন্যদের যে দোষত্রুটি আছে তা প্রচার করতে থাকে এবং তাদের যে ভাল গুণাবলী আল্লাহ তাআলা দান করেছেন তা উপেক্ষা করতে থাকে, তখন ইসলামের শত্রুরা এই সুযোগ কাজে লাগায়। তারা এই সমস্ত মতবিরোধের সুযোগ নিয়ে নিজেদের নিকৃষ্ট উদ্দেশ্য সাধনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর তাদের ভিতরের ঘৃণ্য উদ্দেশ্যসমূহকে হাসিল করার জন্য মুসলিমদের মধ্যে আরও বিরোধ সৃষ্টি করতে তৎপর হয়। এর ফলশ্রুতিতে উম্মত নানা মত ও দলে বিভক্ত হতে থাকে। তাদের মধ্যে নানা ফিরকাহ ও মাযহাবেরর সৃষ্টি হয়। ফলে প্রচণ্ডভাবে তর্কযুদ্ধ চলতে থাকে। নানা ধরনের কথাবর্তা চলতে থাকে, আর আমলে ঘাটতি হতে থাকে। আর তখন হতেই যারা আমাদের ভয় পেত, তারা আমাদের ক্ষতি করতে তৎপর হয়ে উঠে। ফলে বহু মুসলিম তথা দেশ দীর্ঘ সময় খৃষ্টানদের করতলগত হয়। তাতাদের দ্বারা পদানত হয়। তারপর আসে নাস্তিকদের নাস্তিকতা, খৃষ্টানদের ও ইয়াহুদীদের চক্রান্ত যা আজকের মুসলিমদের দিকে তাকালে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়।
মতবিরোধ দূরীভূত করে কল্যাণ ফিরিয়ে আনার উপায়
এ ধরণের ভুল ভ্রান্তির ব্যাপারে বড় বড় ইসলামী চিন্তাবিদ সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। ফলে প্রতিটি দেশ ও যামানায় বহু ওলামাগণ সচেষ্ট হয়েছেন নিজেদের পারস্পরিক মতবিরোধ দূরীভূত করতে এবং তাদের ঐ মূলের দিকে ফিরিয়ে আনতে, যার সাথে সম্পর্ক থাকা সকলের জন্যই অত্যন্ত গর্বের বিষয়। তার উপর প্রতিটি মুসলিমই ভরসা করে। আর তা হল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ। এর মাধ্যমেই মুসলিমদের একতাবদ্ধ করা সম্ভব, সম্ভব পারস্পরিক মতবিরোধ দূরীভূত করা এবং এবং নিজেদের মধ্যে বিরাজমান হিংসা বিদ্বেষ দূর করা।
প্রতিটি মুসলিমের উপর করণীয় ওয়াজিবগুলোর মধ্য একটি হলো- মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব করা, বিশেষ করে ওলামাদের সাথে। কারণ তারাই হচ্ছেন সালাফে সালেহীনদের আদর্শ স্বরূপ এবং রাসূলদের খলীফা স্বরূপ। উম্মতের মশহুর ইমামগণের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, যে বা যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাসূলের কোন সুন্নাহর বিরোধিতা করেছেন। এমনকি কোন সাধারণ মুসলিমের জন্যও প্রকাশ্যভাবে বিরোধিতা করা, অথবা তার সম্মান হানিকর কোন করা সম্ভব নয়। তারা সমস্টিগতভাবে একীন-ঈমানের সাথে একমত যে, যে সমস্ত সহীহ হাদীসের বিপরীতে কোন সহীহ হাদিস নেই তার উপর আমল করা ওয়াজিব। আর রাসূলের কথার উপর অন্য কারো কোন কথাকে প্রাধান্য দেয়া কোন ভাবেই জায়েয নেই ।
আলেমগণের সাথে সাধারণ মুসলিমের সম্পর্ক
কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে গভীর সম্পর্কের পর মুমিনদের বিশেষত: আলেমগণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা মুসলিমদের অবশ্য করণীয়। কেন